নীলার সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল গুলশানের একটি বইয়ের দোকানে। সে তখন বই উল্টে-পাল্টে দেখছিল, আর তার আঙুলের নখে লাল নেইল পলিশ। সাজানো ছিল, কিন্তু যেন ইচ্ছে করে এলোমেলো।

আমি পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম, চুপচাপ। হঠাৎ সে পিছনে ফিরে তাকিয়ে হেসে বলল,
— “আপনি কি আমার পিছে দাঁড়িয়ে গল্প লিখছেন নাকি?”

আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললাম,
— “আপনার আঙুলের নখ দেখে গল্প শুরু করেছি, নামটা পেলে শেষটা লিখে ফেলতাম।”
সে হেসে উঠল।
— “আমি নীলা। আপনি?”
— “আরিয়ান।”

সেদিনই শুরু। তারপর প্রায়ই আমাদের দেখা হতো — কখনো ক্যাফেতে, কখনো সিনেমা হলে, কখনো শুধু ঢাকার ভেজা বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে।

একদিন বৃষ্টি হচ্ছিল খুব। নীলা ভেজা চুলে আমার বাসায় এলো, তার শাড়ির পাড় ভিজে গালিচা ছুঁয়েছে। আমি কিছু বলতে পারিনি।
সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
— “আমি জানি তোমার বুকের ভেতর একটা শব্দ আটকে আছে। বলো না… আমি শুনে নেবো।”

আমি বলেছিলাম —
— “আমি তোমায় ভালোবাসি। একদম... তুমিই যেমন, ঠিক তেমন করে।”

সে কাছে এসেছিল, তার ভেজা গায়ের গন্ধ, নরম ঠোঁট, চোখে চোখ — সবকিছু যেন ঢাকার সেই সন্ধ্যায় একসাথে থেমে গিয়েছিল। কিছু না বলেও আমরা সব বলেছিলাম।

সেই রাতের পর, আমরা আর আগের মতো থাকিনি। সম্পর্কের নাম ছিল না, নিয়ম ছিল না—শুধু ছিল অনুভব। কফির কাপে ঠোঁট ছোঁয়ানো, শাড়ির খোঁপায় আঙুল জড়ানো, আর বৃষ্টির শব্দে একে অন্যের ভেতর হারিয়ে যাওয়া।

আজো মাঝে মাঝে আমি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকি, নীলার ভেজা শাড়ির গন্ধ মনে পড়ে। সে আসবে না জেনেও মনে হয়, হয়তো কোন এক সন্ধ্যায়, ছাতা হাতে নীলা আবার বলবে—
— “আরিয়ান, গল্পটা আজ শেষ করো না... আমাকে দিয়ে যাও মাঝখানে।”